বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি ও সময়।
বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি ও সময়। বস্তায় আদা চাষ করতে আলাদাভাবে কোন জমির প্রয়োজন হয় না। অনেকের বাড়িতে এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হয় আরো অনেকে কিছু আশাবাদ সম্পর্কে কোন কিছু জানেনা। তাই আমি আজকে পস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি ও সময় সম্পর্কে আলোচনা করব।
বস্তায় আদা চাষ একটি লাভজনক চাষাবাদ পদ্ধতি এ পদ্ধতিতে খুব অল্প পরিমাণ জমিতেই অধিক ফলন পাওয়া সম্ভব। আবার যেসব এলাকা অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে যে সমস্ত জমি ডুবে যায় ডুবে যে ফসল নষ্ট হয়ে যায়। এ পদ্ধতিতে ফসল ডুবে যাওয়ার কোন প্রকার ভয় নেই কারণ এটা সাধারণত উচ্চ জমিতে বা বসতবাড়ির আঙিনায় বস্তায় আদা চাষ করা হয়। আবার একটি ফসল তোলার পরে আবার নতুন করে ফসল ফোলাতে কোন প্রকার সারের প্রয়োজন হয় না। খরচ একেবারে সীমিত থাকে এবং লাভের পরিমাণ বেশি হয়।
পেজ সূচিপত্রঃ যে অংশ পড়তে চান ক্লিক করুন।
- বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে।
- বস্তায় আদা চাষের সময়।
- বস্তায় আদা চাষের জন্য মাটি তৈরি
- বীজের আকার ও শোধন।
- বস্তায় আদার চারা রোপন পদ্ধতি।
- আদার রোগ ও পোকামাকড়।
- আদা গাছের রোগের লক্ষণ।
- ফসল সংগ্রহ করার পদ্ধতি।
- শেষ কথা।
বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে।
বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি দিন দিন এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এ চাষ পদ্ধতি তুলনামূলকভাবে সহজ হয় এবং জায়গা কম লাগায় এর চাষ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সাধারণত বাড়ির পতিত আঙিনায় চাষ করা সম্ভব বলে অনেকেই বাড়তি জায়গায় বস্তায় আদা চাষ করছে। বস্তায় আদা চাষের উপকরণগুলো অনেক সহজলভ্য হয় অনেকেই এ দিকে ঝুকছে। এ পদ্ধতিতে যেমন মাটি ভাই তো রোগের আক্রমণ অনেক কম হয় এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলেও আধা গুলো বস্তায় থাকার কারণে কোন প্রকার ক্ষয়ক্ষতি হয় না। এক কথায় বলতে গেলে কোন প্রকার রিক্স নেই এখানে।
সাধারণত পরিত্যক্ত বস্তা এবং বসতবাড়ির বাড়তি আঙিনা বা মাচায় এ চাষের জন্য
যথেষ্ট। বিশেষ করে ছায়াযুক্ত আঙিনায় এ চাষ করতে পারবেন। আদা দৈনন্দিন
জীবনে নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তু। বর্তমানে বাজারে প্রচুর চাহিদা রয়েছে তাই আপনি
একটু চেষ্টা করলে বাড়ির পাশে বা বাড়ির ছাদে আদা চাষ করতে পারবেন। আর এ
ক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো বস্তায় আদা চাষ।
বস্তায় আদা চাষের সময়।
আমাদের দেশের সমস্ত ফসলই প্রায় একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তার কারণ হলো আমাদের
দেশের ভৌগলিক অবস্থা। আরে ভৌগোলিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে আমাদের দেশে চাষাবাদ
করা হয়। আদার ক্ষেত্রেও প্রায় একই নিয়ম অনুসরণ করে চাষ করা হয়। তাই একটি
নির্দিষ্ট সময়ে আদা চাষের জন্য উপযুক্ত বলে ধারণ করা যায়।
আরো পড়ুনঃ তৈলাক্ত ত্বক ফর্সা করার ঘরোয়া উপায়।
বস্তায় আদা চাষের জন্য মার্চের শেষ সপ্তাহ একটি আদর্শ সময় হিসেবে ধরা হয়। মশলাপাতির মধ্যে আদার ধামরাই একটু চড়া হিসেবে ধরা হয়। সব থেকে বড় কথা হচ্ছে কীটনাশক মুক্ত আদাবা যায় নিজে চাষ করলে। তাই অনেকেই এখন বস্তায় আদা চাষের জন্য ঝুঁকছে। কিন্তু আপনি কি কখনো ভেবেছেন আরো চাষের কথা। কোন ধরনের পরিশ্রম ছাড়াই নিজের বারান্দা বা ছাদ বাগান হিসেবে আপনি আদা চাষ করতে পারেন। আপনি এভাবে বস্তায় আদা চাষ করে আপনার পরিবারের চাহিদা মেটাতে পারবেন।
বস্তায় আদা চাষের জন্য মাটি তৈরি।
বস্তায় আদা চাষের জন্য সর্বপ্রথমে আপনাকে মাটি তৈরি করে নিতে হবে কেননা খুব অল্প
সংখ্যক মাটিতে আপনি আদা চাষ করবেন এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই মাটি র নির্বাচন করতে
হবে। প্রথমে আপনি মাটির শুকনো ঠেলগুলো ভেঙে ঝরঝরে করে নিবেন। বস্তায় যেন
মাটিগুলো ফেঁপে থাকে সেজন্য আপনি ডার্মি কম্পোস্ট এবং সাই মিশাতে পারেন।
এছাড়াও আপনি বিভিন্ন প্রকার জৈব পদার্থ বর্ষার মেশাতে পারেন এগুলো আপনার ফসলের
খাদ্য হিসেবে কাজ করবে।
এবার মাটিগুলো স্তূপ করে দুই একদিন রেখে দিতে হবে যেন মাটিগুলো জৈব সারের উপাদানগুলো খুন করে নিতে পারে। এরপর আপনি বস্তা নিয়ে এসে মাটি গুলো খুব সুন্দর করে বস্তার মধ্যে ভরে দিবে। মনে রাখবেন বস্তার মাটি যত আলগা হবে আধাগুলো তত সহজে বড় হতে পারবে। এভাবে আপনি মাটি তৈরি করে বস্তায় আধার চাষ করতে পারবেন।
বীজের আকার ও শোধন।
আদা চাষের প্রথমেই যে কাজটি আপনাকে করতে হবে সেটা হচ্ছে বীজের আকার এবং শোধন করে
নিতে হবে। কারন আপনারা সকলেই জানেন বীজ যদি ভালো থাকে তাহলে ফসল ভালো জন্মাবে।
তাই ব্রিজের দিকে আপনাকে অবশ্যই নজর দিতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি বীজ প্রায়
৭৫ গ্রাম করে কেটে নিতে হবে এবং বীজগুলো শোধন করে নিতে হবে। বীজগুলো শোধন করার
জন্য আপনাকে বীজগুলোকে পানির ভিতর ভিজিয়ে রাখতে হবে কিছুক্ষণ।
তারপরে সোদন কারী কেমিক্যাল মিশিয়ে দিতে হবে। এরপর বীজগুলোকে পানির মধ্যে
থেকে তুলে খড়ের গাদায় খড়ের উপর রেখে উপরে আবার খড় দিয়ে যা দিতে হবে।
সাধারণত 2 দিন পরেই এখান থেকে চার গজাবে। আর একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে আদা
গুলোকে বালতির মধ্যে ছত্রাক নাশক মিশ্রিত পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। এভাবে বীজ শোধন
করে চাষ করতে হবে তাহলে ফলন অনেক বৃদ্ধি পাবে গাছের কোন প্রকার রোগ বালাই
হবে না।
বস্তায় আদার চারা রোপন পদ্ধতি।
বীজ রোপন করে চারা তৈরি করে নেওয়ার পরে তা বস্তার ভিতর লাগাতে হবে। এক্ষেত্রে ২০
থেকে ২৫ দিন পর পবনকৃত আদা থেকে চারা বের হবে। তখন তারাগুলো সুন্দরভাবে তুলে
বস্তার ভিতর তিন জায়গায় তিনটি চারা বসিয়ে দিতে হবে। দিনের বেশিরভাগ সময়
রোদ পাওয়া যায় এমন কোন স্থানে বস্তাটি রাখতে হবে। কিছুদিনের মধ্যেই আধা কাপ
বস্তার ভিতর বড় হতে থাকবে।
আরো পড়ুনঃ মালদ্বীপ ভ্রমণ গাইড ও ১০ টি পর্যটন এলাকা।
এছাড়া গাছ গুলো বড় হতে থাকলে মাঝেমধ্যে পানি দিতে হবে। বস্তা একটি ছোট জায়গা
হলেও মাঝে মাঝে এখানে কিছু আগাছা জন্মাবে আগাছা গুলোকে আপনি অবসর সময়ে তুলে
দিবেন তাহলে ফলন ভালো হবে। গাছে মাঝে মাঝে কোন প্রকার পোকার দেখলে সঙ্গে সঙ্গে তা
প্রতিকার করতে হবে। মনে রাখবেন কেবল সুস্থ কাছ থেকেই ভালো ফসল আশা করা
যায়।
আদার রোগ ও পোকামাকড়।
আপনারা সবাই জেনে থাকবেন গাছে যদি কোন প্রকার রোগ আক্রমণ করে সে ক্ষেত্রে গাছের
স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হবে। গাছকে সুস্থ সবল দেখাবে না এবং কাজ আস্তে আস্তে
মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে।একটি সুস্থ সবল গাছ এবং একটি রোগা আক্রান্ত গাছ দেখলে
আমরা সকলেই বুঝতে পারব কারণ একটি সুস্থ গাছ সবসময় সুস্থ সবল থাকবে দেখাবে। গাছে
কোন উপকার করে আক্রমণ দেখলে সঙ্গে সঙ্গে পত্রিকার করতে হবে। আদা গাছে সাধারণত
বিভিন্ন প্রকার ছত্রাকের আক্রমণ দেখা যায় এবং ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দিলে পাতায়
হলুদ রঙের ভাব দেখা যায়। এ সময় রাইজোমের আক্রমণ করে বলে আদার বৃদ্ধি করতে
পারেনা ফলে ফলন কম হয়।
এক্ষেত্রে প্রথমে পাতা হলুদ হয়ে যায় কিন্তু পাতায় কোন প্রকার দাগ থাকে না। পরবর্তীতে গাছ ঢলে পড়ে এবং শুকিয়ে যায় রাইজোমের আক্রমণের কারণে আদা অনেক সময় মাটির নিচে পচা যায় । সাধারণত ভেজা ও স্বেচ্ছায়তে জায়গায় এ ধরনের রোগ বেশি দেখা যায়। তাই আপনি যখন আদার বস্তা যেখানে রাখবেন সেখানটা অবশ্যই শুষ্ক থাকতে হবে এবং আদার গোড়ায় যেন কোন প্রকার পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে ।
আদা গাছের রোগের লক্ষণ।
আপনারা সবাই জেনে থাকবেন গাছে যদি কোন প্রকার রোগ আক্রমণ করে সে ক্ষেত্রে গাছের
স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হবে। গাছকে সুস্থ সবল দেখাবে না এবং কাজ আস্তে আস্তে
মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে। তাই রোগের লক্ষণ দেখা মাত্রই গাছে রোগের লক্ষণ দেখা
মাত্রই তা প্রতিকার করতে হবে। প্রথমে পাতা হলুদ হয়ে যাবে কিন্তু পাতার উপরে কোন
প্রকার স্পট করবে না। পরবর্তীতে গাছ ধীরে ধীরে শুকিয়ে মাটির সঙ্গে
লুটিয়ে পড়বে। অনেক সময় ডগ আছে ঢোকারি পোকা আক্রমণ করলে গাছের বৃদ্ধি
ব্যাহত হয় ফলে উৎপাদন কমে যায়। এ প্রকার মল কমলাও হলুদ রঙের হয়ে থাকে অনেক
সময় দেখেও গাছের রোগের আক্রান্ত সম্পর্কে বোঝা যায়।
আরো পড়ুনঃ নেপাল টুর প্যাকেজ ফ্রম বাংলাদেশ।
এবং ধীরে ধীরে গাছ মারা যাবে। এই সমস্ত রোগ হয় গাছের গোড়ায় সাথে সাথে ভাব থাকলে এবং গাছের আয়োজন দেখা দিলে। অনেক সময় দেখবেন গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে গাছের বৃদ্ধি পাচ্ছে না বলতে পারবেন গাছের রোগ আক্রমণ করেছে। অনেক সময় লক্ষ্য করবেন গাছের গোদ ঠিক থাকবে না গাছে কেমন যেন একটা অপুষ্টি অপুষ্টি জনিত ভাব দেখা যাবে।একটি সুস্থ সবল গাছ এবং একটি রোগা আক্রান্ত গাছ দেখলে আমরা সকলেই বুঝতে পারব কারণ একটি সুস্থ গাছ সবসময় সুস্থ সবল থাকবে দেখাবে। গাছে কোন উপকার করে আক্রমণ দেখলে সঙ্গে সঙ্গে পত্রিকার করতে হবে। আদা গাছে সাধারণত বিভিন্ন প্রকার ছত্রাকের আক্রমণ দেখা যায় এবং ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দিলে পাতায় হলুদ রঙের ভাব দেখা যায়। এ সময় রাইজোমের আক্রমণ করে বলে আদার বৃদ্ধি করতে পারেনা ফলে ফলন কম হয়।
ফসল সংগ্রহ করার পদ্ধতি।
সাধারণত জুন জুলাই মাসে আলাদা লাগালে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে তোলার
উপযুক্ত হয়। এক্ষেত্রে বস্তা কেটে বস্তার মাটি সরিয়ে আদা সংগ্রহ করা হয়।
আর যদি গাছের পরিমাণ বেশি থাকে বা গাছ যদি অনেক বড় বড় হয় তাহলে সর্বপ্রথমে
কাছে দিয়ে কাজগুলোকে কেটে সরিয়ে নিবেন। কারণ গাছ আমাদের কোন প্রকার
প্রয়োজনে আসবে না তাই গাছ কেটে নিলে ফসল সংগ্রহ করাটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। বস্তা
পস্তা সুন্দর করে কেটে মাটি সরিয়ে সমস্ত আদা আলাদা করতে হবে খেয়াল রাখতে হবে
যেন বস্তার মধ্যে কোন আদা থেকে না যায় ।
প্রতিটি বস্তা থেকে এবং তিনটি গাছ থেকে এক থেকে দেড় কেজি আদা শ পাওয়া
সম্ভব। যদি ফলন ভালো হয় তাহলে এর থেকেও বেশি আশা করা যায়। আর যদি হাইবিড আদা
হয় তাহলে অবশ্যই ফলন বেশি হবে। মাটিযুক্ত আধা গুলোকে সুন্দর করে ধুয়ে রোদে
শুকিয়ে সংগ্রহ করে রাখা যায় যেতে পারে এবং যে মাটি অবশিষ্ট থাকবে সেই মাটি
দিয়ে আবার নতুন কোন কিছু ফলানো যেতে পারে সে ক্ষেত্রে কোন প্রকার প্রয়োজন হবে
না।
শেষ কথা।
তাহলে প্রিয় পাঠক আজকে আমি আপনাদেরকে আদা চাষের পদ্ধতি এবং সময় নিয়ে যতটুকু
আলোচনা করেছি সম্পূর্ণটুকু বুঝতে পেরেছেন আশা করি। আর্টিকেল টিতে আমি চেষ্টা
করেছি বস্তা আদা চাষের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিস্তারিত আলোচনা করতে। আপনারা যদি
এ সমস্ত দিকগুলো অনুসরণ করে বস্তায় আদা চাষ করতে পারেন তাহলে অবশ্যই আপনারা ভালো
ফলন পেতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি যেমন লাভবান হবেন তেমনি আপনার পরিবারের চাহিদা
মিটিয়ে আপনি বাজারে এগুলো বিক্রি করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনার অতিরিক্ত কোন জমি
প্রয়োজন হবে না আশপাশে পড়ে থাকা জমিতেই আপনি এগুলো আবাদ করতে পারবেন।
আমার লেখাগুলো যদি আপনাদের ভালো লাগে লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই লেখাটির শেয়ার করবেন এবং আপনাদের পরিচিত মানুষদের দেখার সুযোগ করে দিবেন। আর যদি লেখার মধ্যে কোন প্রকার ভুল ত্রুটি থাকে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন। আমরা আপনাদের কমেন্টের রিপ্লাই দেয়ার চেষ্টা করব আল্লাহ হাফেজ।
স্বপ্ন পথ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url